উত্তম সংবিধানের বৈশিষ্ট্য – বাংলাদেশের সংবিধান প্রনয়ন কে করেন

উত্তম সংবিধানের বৈশিষ্ট্য

উত্তম সংবিধানের বৈশিষ্ট্য – প্রতিটি রাষ্ট্রের দপর্ন বলা হয় সংবিধান কে। যে দেশের সংবিধান যত বেশি উত্তম হবে সে দেশ ঠিক ততো বেশী উন্নয়নের দিকে ধাবিত হবে। একটি উন্নয়নশীল রাষ্ট্র

Advertisement
কে চিহ্নিত করা যায় সে দেশের সংবিধানের মাধ্যমে।

কোনো সংবিধান ছাড়া রাষ্ট্র চলতে পারেনা। আর উত্তম সংবিধান ছাড়া কোনো রাষ্ট্র উন্নতি করতে পারেনা। একটি দেশের সকল কিছু পরিচালিত হয় সংবিধান এর মাধ্যমে। সংবিধান চাইলেই পরিমার্জিত করতে পারে। সংবিধান এর দুটি ধারা আছে – ১, লিখিত সংবিধান ও ২, অলিখিত সংবিধান। প্রতিটি রাষ্ট্রের জন্য লিখিত, অলিখিত সকল সংবিধানের প্রয়োজন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

আমাদের আজকের আর্টিকেলে জানবো উত্তম সংবিধানের বৈশিষ্ট্য গুলো সম্পর্কে। এ ছাড়াও থাকবে বাংলাদেশের সংবিধানের বৈশিষ্ট গুলো। অনার্সের ছাত্র-ছাত্রীদের সংবিধান থেকে অনেক প্রশ্ন আসে। সংবিধান থেকে প্রশ্ন আসলে লিখতে পারবেন আর্টিকেল টি পড়ার পরে। আমরা সহজ ভাবে আপনাদের মাঝে উপস্থাপন করব উত্তম সংবিধানের বৈশিষ্ট্য গুলোকে।

উত্তম সংবিধান বলতে কী বুঝ?

সংবিধান হল একটি রাষ্ট্রের প্রান। রাষ্ট্র দাঁড়িয়ে থাকে তার সংবিধানের বিধানের উপর। সকল রাষ্ট্রের এই একটি সংবিধান থাকে যেটা দ্বারা রাষ্ট্র পরিচালনা করা হয়। কিন্তু প্রতিটি দেশের সংবিধান এই উত্তম সংবিধান নয়।

কোনো দেশের সংবিধান কে উত্তম সংবিধান বলার জন্য অনেক গুন থাকতে হয়। যে গুন গুলো সংবিধানে বিদ্যমান থাকলে সেটাকে তখন উত্তম সংবিধান হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। যদি এরকম কোনো গুন কোনো সংবিধানে পাওয়া না যায় তবে সেটা উত্তম সংবিধান নয়।

যে সংবিধানের মধ্যে কিছু গুন সমন্বয় পাওয়া যায় তাকে উত্তম সংবিধান বলা হয়। উত্তম সংবিধান এর ব্যাপারে অনেকেই অনেক মত দিয়েছেন। যেমন- Willoughby এর মতে,

“উত্তম সংবিধান হলো আইন ও সংবিধানের বিধি-বিধান দ্বারা নিয়ন্ত্রিত ও কার্যকর সংবিধান”

উত্তম সংবিধানের বৈশিষ্ট্য

রাষ্ট্রের উন্নয়ন এর জন্য উত্তম সংবিধানের কোনো বিকল্প নেই। সংবিধান কে যত বেশি উত্তম সংবিধানে রুপান্তর করা যাবে দেশ ততো বেশী সুন্দর ভাবে পরিচালনা করা সম্ভব হবে। কোনো সংবিধান কে উত্তম সংবিধান বলার জন্য বেশ কিছু গুনাবলি থাকতে হবে। নিম্নে উত্তম সংবিধানের বৈশিষ্ট গুলো বিস্তারিত তুলে ধরলা

১। স্পষ্টতা – একটি উত্তম সংবিধানের অন্যতম বৈশিষ্ট হলো সংবিধানের প্রতিটি ধারা স্পষ্ট ও বোধগোম্য হওয়া দরকার। কোনো ধারা যদি সঠিক ভাবে বুঝতে অসুবিধা হয় তবে সেটা উত্তম সংবিধানের মধ্যে বর্তায় না।

আরো পড়ুন- পদ্মা সেতু সম্পর্কে সাধারণ জ্ঞান – গুরুত্বপূর্ণ MCQ প্রশ্ন

২। সকল ক্ষমতার ভারসাম্য রক্ষা – উত্তম সংবিধানের বৈশিষ্ট্য এর মধ্যে এটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ। রাষ্ট্রের সকল আইনগত ক্ষমতার উপরে ভারসাম্য রক্ষার জন্য সংবিধানের ধারা থাকতে হবে।

৩। জনগনের মত এর অধিকার– উত্তম সংবিধান সবসময় জনগনের মতের উপর প্রধান্য দিবে। জনমত গঠনের মাধ্যমে সংবিধানের ধারা গুলো পরিচালিত করবে।

৪। মৌলিক অধিকার থাকা – উত্তম সংবিধানের অন্যতম বিশেষ গুন হলো সেখানে জনগনের মৌলিক অধিকার গুলো প্রধান্য দেয়া। যার ফলে কোনো শাসক জনগনের উপর স্বৈরাচারি হতে পারবে না।

৫। সহজ ভাষায় রচিত– উত্তম সংবিধানের বৈশিষ্ট্য গুলোর মধ্যে এটি একটি। জনগন যাতে সহজেই সংবিধান পড়ে ও বুঝতে পারে। এর জন্য সংবিধান রচনা করতে হবে সহজ ভাষায়।

আরো পড়ুন- ফেসবুক আসক্তি থেকে মুক্তির উপায় – ফেসবুকের ক্ষতিকর দিক

৬। বার বার পরিবর্তন করা যাবেনা – সংবিধানের সময়কাল অনেক বেশি থাকতে হবে। সংবিধান বার বার পরিমার্জন করা হলে সেটা উত্তম সংবিধান থাকেনা।

৭। জনগনের প্রতিচ্ছবি তুলে ধরা – উত্তম সংবিধানে অবশ্যই দেশের জনগনের চিন্তা চেতনা, আশা, ইতিহাস ইত্যাদি তুলে ধরতে হবে। যেটা জনগনের কাছে নেই অহেতুক কোনো বিষয় সংবিধানে উল্লেখ্য করা যাবে না।

৮। প্রয়োজন অনুযায়ী সংশোধন করা – উত্তম সংবিধানের বৈশিষ্ট্য এর মধ্যে জনগনের চাহিদা কাজ ইত্যাদির উপর নির্ভর করে অল্প পরিমান পরিমার্জন করা।

৯। সরকারি আইন লিপিবদ্ধ করা – উত্তম সংবিধানে সরকারি একটি দেশের সকল আইন সম্পর্কে অবহিত করা উত্তম সংবিধানের বৈশিষ্ট।

আরো পড়ুন- আগামীকাল আবহাওয়া কেমন থাকবে – কিভাবে জানবেন দেখে নিন

১০। ধর্ম নিরপেক্ষতা – উত্তম সংবিধান সবসময় সকল ধর্মের মানুষ কে সমান সুজোগ সুবিধা প্রদান করে। দেশে সকল ধর্মের মানুষ তাদের নিজস্ব ধর্ম অনুযায়ী চলতে পারে।

উত্তম সংবিধানের অন্যতম বৈশিষ্ট্য কোনটি

বিশ্বশান্তি– বিশ্ব শান্তি হলো উত্তম সংবিধানের অন্যতম বৈশিষ্ট। যেখানে বিশ্বশান্তির উপর সংগতি পূর্ন হবে। বিশ্বের যে কোনো স্থানের যে কোনো মানুষের জন্য সাহাবস্থানের দৃড় প্রত্যয় থাকবে।

উত্তম সংবিধানের প্রধান ৩টি বৈশিষ্ট্য

১। স্পষ্টতা – সংবিধানের প্রধান বৈশিষ্ট হলো স্পস্টতা। সংবিধানের সকল ধারা সুবিন্যস্ত ভাবে সকলে বুঝে সেভাবে লিপিবদ্ধ করতে হবে।

২। নৈতিকতা– উত্তম সংবিধানের বৈশিষ্ট্য গুলোর মধ্যে নৈতিকতা বিষয় টি উল্লেখ্য থাকতে হবে। যাতে করে দেশের সকল রাজনৈতিক দল গুলো সংবিধান কেন্দ্রিক ভাবে গড়ে উঠতে পারে।

আরো পড়ুন- কিভাবে ফ্রি নেট চালাবো – নতুন নিয়মে ফ্রি ইন্টারনেট নিন সকলেই

৩। বাস্তবসম্মত হওয়া– সংবিধানের ধারা উপধারা গুলো সাম্প্রতিক সময়ের উপর বিন্যস্ত থাকতে হবে। বাস্তব সময়ের সাথে সকল বিষয় গুলো উল্লেখ্য রাখতে হবে।

বাংলাদেশের সংবিধান প্রনয়ন হয় কিভাবে

বাংলাদেশের সংবিধান রচনা করা হয় গনপরিষদের মাধ্যমে। ড.কামাল হোসেন কে ১৯৭২ সালে গনপরিষদ এর সভাপতি করা হয় ও ৩৪ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়। এর পরে সংবিধান প্রনয়নের জন্য ৭৪ টি বৈঠক ও ৯৮ টি প্রস্তাব গ্রহন করেন। পরিশেষে, ১৯৭২ সালের ৩ নভেম্বর বাংলাদেশের সংবিধান লেখা শেষ হয় এর পরে ১৬ ডিসেম্বর থেকে কার্যকর করা হয়।

উত্তম সংবিধানের বৈশিষ্ট্য
বাংলাদেশের সংবিধান। ছবিঃ উইকিপিডিয়া

বাংলাদেশের সংবিধানের বৈশিষ্ট্য

  • বাংলাদেশের সংবিধানে জনমতের গুরুত্ব এর কথা চিন্তা করে গনতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করে।
  • সকল ধর্মের মানুষের জন্য সমান আইন প্রনয়ণ হয়।
  • জনগনের মৌলিক অধিকারের কথা সংবিধানে রয়েছে।
  • সংস্কৃতি, সমাজ ব্যবস্থা সম্পর্কে বাস্তব বিষয় গুলো সংরক্ষণ করা হয়েছে।

বাংলাদেশের সংবিধান কি উত্তম সংবিধান

বাংলাদেশের সংবিধানে জনগন কে ধর্ম জাতী নির্বিশেষে সমান অধিকার দেয়া হয়েছে। এখানে কোনো নির্দিষ্ট গোষ্ঠি কে অধিকার প্রদান করেনি। সকলের জন্য সমান আইনের ব্যবস্থা। কোনো রাজনৈতিক দল কে স্বৈরাচারী হওয়ার সুযোগ প্রদান করে না।

আরো পড়ুন- সকল রোগের ঔষধ কালোজিরার উপকারিতা সম্পর্কে জেনে নিন

নৈতিকতা, স্পস্টতা বাংলাদেশের সংবিধানে বর্ণিত আছে। যা একটি দেশ কে উন্নয়নের ধারায় নিয়ে যেতে সক্ষম। সবশেষে বলা যায়, বাংলাদেশ সংবিধান উত্তম সংবিধানের মধ্যে বিবেচনা করা যেতে পারে।

আমাদের শেষ কথা

উত্তম সংবিধানের বৈশিষ্ট্য – আর্টিকেলে আমরা বাংলাদেশের সংবিধান সম্পর্কে ও হালকা ধারণা প্রদান করার চেষ্টা করলাম। আপনারা যারা সংবিধান সম্পর্কে জানতে চান আশা করি আপনারা ভালোভাবে জানতে পেরেছেন। ভুলত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টি তে দেখার অনুরোধ রইলো। ধন্যবাদ।

আরো পড়ুন- আদার উপকারিতা – আদার ক্ষতিকর দিক গুলো কি কি?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *